প্রকাশিত: Thu, Jun 27, 2024 12:08 PM
আপডেট: Sun, Jun 30, 2024 8:59 PM

[১]মার্কিন আদালতে দোষ স্বীকারের পর মুক্ত জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়া ফিরলেন

ইকবাল খান, সাজ্জাদুল ইসলাম: [২] উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বুধবার নিজ জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় পৌঁছেছেন।

[৩] জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে আসেন তার স্ত্রী স্টেলা অ্যাসাঞ্জ এবং তার বাবা জন শিপটন। সূত্র: সিএনএন, বিবিসি

[৪] এর আগে মার্কিন গোপন দলিল ফাঁস করে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ওয়েবসাইট উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর মার্কিন এক আদালতে দোষ স্বীকার করার পর মুক্তি পান। সূত্র: বিবিসি

[৫] বিচারক বলেছেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যে ৬২ মাস জেল খেটেছেন সেটাই যথেষ্ট। রায়ের পর অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ ।

[৬] মার্কিন বিচার বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ বিনা অনুমতিতে আর যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে পারবেন না।

[৭] আদালতের রায়ের পর জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের আইনি টিম এ মামলাকে ‘মুক্ত মতের জয়’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তার আইনজীবী জেনিফার রবিনসন বলেছেন, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ঘটনা মুক্ত গণমাধ্যম ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূচনা করেছে।

[৮] “শেষ পর্যন্ত ১৪ বছরের আইনি লড়াই শেষে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মুক্ত মানুষ হিসেবে বাড়ি ফিরতে পারছেন,” সাংবাদিকদের বলছিলেন তার আইনজীবী। 

[৯] বুধবার প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত মার্কিন ভূখণ্ড নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের আদালতের রায়ের পর মুক্ত মানুষ হিসেবেই আদালত কক্ষ থেকে হেঁটে বেরিয়ে আসেন।

[১০] এর আগে সোমবার তাকে মুক্তি দেয় যুক্তরাজ্য। নিজের অপরাধ স্বীকার করার বিষয়ে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে সমঝোতা চুক্তি করেছেন, সেটির ধারাবাহিকতাতেই তাকে ছেড়ে দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। সেখান থেকে তিনি সরাসরি নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের আদালতে হাজির হন।

[১১] যুক্তরাজ্যের পুলিশ ৫২ বছর বয়সী জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে ২০১৯ সালের গ্রেপ্তার করেছিল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি মার্কিন প্রতিরক্ষা বিষয়ক গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত।

[১২] প্রসঙ্গত ২০১০ সালে ইরাক ও আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস করে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক হৈচৈ ফেলে দেয় জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ প্রতিষ্ঠিত ওয়েবসাইট উইকিলিকস।

[১৩] এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে এক পর্যায়ে তিনি লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয়ে নেন এবং সেখানেই প্রায় সাত বছর কাটান।

[১২] নর্দান ম্যারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের যে আদালত কক্ষে নিজেকে মুক্ত ঘোষণার সিদ্ধান্ত পেলেন তার বাইরে অপেক্ষা করছিলো অনেক সাংবাদিক।

[১৪] তবে তার একজন প্রতিনিধি জানিয়েছিলো যে তিনি কোন প্রশ্নের জবাব বা কোন বিবৃতি দিবেন না।

[১৫] রায় ঘোষণার সময় বিচারক ম্যাংলোনা বলেছে, মামলাটি যদি এক দশক আগে তার কাছে আসতো তা হলে তিনি দোষ স্বীকারের আবেদন গ্রহণ করতেন না। কিন্তু ২০২৪ সালের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন, বলছিলেন তিনি।

[১৬] তিনি যে বিষয়টি ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তা হলো- জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের কাজে এমন কাউকে পাওয়া যায়নি, যিনি ক্ষতির শিকার হয়েছেন। একই সাথে প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়ে চেলসিয়া ম্যানিংয়ের কারাদণ্ডের ঘটনারও উল্লেখ করেছেন তিনি।

[১৭] “৬২ মাস অ্যাসাঞ্জের কারাগারে থাকা যথেষ্ট,” বলছিলেন তিনি।

[১৮] যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে সমঝোতার অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের আদালতে দোষ স্বীকার করে আবেদন করেছিলেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ। ওই সমঝোতার মধ্যে ছিল যে, জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দোষ স্বীকার করলে এতদিন ধরে যে কারাবাস করেছেন, সেটাই শাস্তি হিসাবে গণ্য করে তাকে মুক্তি দেয়া হবে।

[১৯] ইকুয়েডর দূতাবাসে সাত বছরের স্বেচ্ছা বন্দী এবং পাঁচ বছর আটক থাকতে বাধ্য থাকার পর যে সমঝোতায় তার মুক্তি এলো সেটি হতে কয়েক মাস সময় লেগেছে। শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিলো।

[২০] এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস বা সিপিএস বলেছেন, দোষ স্বীকার করে আবেদনের একটি সম্ভাবনা ‘গত মার্চে প্রথমে তাদের নজরে আসে’। এর পর তারা কীভাবে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে উপস্থাপন এবং মুক্তি পেতে পারেন ‘বিচারক ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ইচ্ছায়’ সে বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে পরামর্শ দেয়।

[২১] তবে কয়েক বছরের অচলাবস্থার পর সমঝোতার সূত্রপাত সম্ভবত হয়েছিলো ২০২২ সালের মে মাসে অস্ট্রেলিয়ার নতুন সরকারের নির্বাচনের সময়। তারা বিদেশে আটক থাকা নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে ফিরিয়ে আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিলো।

[২২] প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ যা করেছেন তার সব তিনি সমর্থন করেন না। তবে ‘যথেষ্ট হয়েছে’ এবং এখন তার মুক্তির সময় এসেছে।

[২৩] এমপিদের একটি দল ওয়াশিংটনে গিয়ে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এ নিয়ে তদবির করে। পরে প্রধানমন্ত্রী নিজেই সরাসরি বিষয়টি রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে জো বাইডেনের কাছে উত্থাপন করেন।

[২৪]এরপর পার্লামেন্টে এক ভোটে একটি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কাছে আবেদন জানানো হয় যাতে করে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরতে পারেন।

[২৫] এরপর নানা তৎপরতা শেষে আইনের বিষয়টি আসে। যুক্তরাজ্যের হাইকোর্ট এক নির্দেশনায় বলে যে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ নতুন করে আবেদন করতে পারবেন।

[২৬] সমঝোতার বিষয়ে ইঙ্গিত আসে আমেরিকানদের দিক থেকেও। এপ্রিলে জো বাইডেন জানান তিনি বিচার প্রক্রিয়া বাতিল করতে অস্ট্রেলিয়ার অনুরোধ বিবেচনা করছেন।

[২৭] হোয়াইট হাউজ অবশ্য বলেছে সমঝোতা প্রক্রিয়ার বিষয়টি বিচার বিভাগের।

[২৮] শেষ পর্যন্ত সব আইনি ও কূটনৈতিক লড়াই শেষে সব পক্ষ এক জায়গায় এসে পৌঁছাতে সক্ষম হলে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের মুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।ধ